একটি মেয়ে দৌড়ে বাসে উঠে বৃষ্টিতে অর্ধেক ভিজে.............

"সহযাত্রী"
জিয়াউল হক

ঈদের বাকি আর দুই দিন কেনাকাটা হয়নি সকালে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।

চট্টগ্রাম থেকে কেনাকাটা সেরে আবার গ্রামের বাড়ি যেতে হবে সন্ধ্যার আগে।

আমার কাছে কেনাকাটা সব চেয়ে খুব কঠিন মনে হয় দোকানদারের সাথে দর কষাকষি খুব বিরক্ত লাগে, না করে কোন উপায় নেই এক হাজার টাকার কাপড় পাঁচ হাজার টাকা হাকাতে তাদের বাধে না আবার ঈদের মৌসুম একদিকে টিপ টিপ বৃষ্টি দুশ্চিন্তায় আছি কি করে কি করব।

বান্দরবান থেকে বাসে যাত্রা করলাম আমার পাশে সীট খালি ব্যাগ টা ওখানে রাখলাম সামনে একটি কাউন্টার থেকে যাত্রী উঠাবে তারপর বিরতিহীন চট্টগ্রাম শহরে।
নিদিষ্ট কাউন্টারে গেয়ে বাস থামে একটি মেয়ে দৌড়ে বাসে উঠে বৃষ্টিতে অর্ধেক  ভিজে যা তা অবস্থা হাতে একটি  ট্রাভেল ব্যাগ আমার পাশে সীটে এসে বসল।
হাত ব্যাগ থেকে মোবাইল বাহির করে মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে দিল দেখতে খুব ক্লান্ত, মনে হয় অনেক রাত ঘুমাইনি সীটে হেলান দিয়ে চুল বিলিয়ে দিল।

তিন ঘন্টার যাত্রা বাস দ্রুতগতিতে ছুটে চলে এই প্রথম কোন অপরিচিত মেয়ের পাশে বসলাম ডান চোখে  বান্দরবানের পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য আর বাম চোখে মেয়েটি দেখি গোলগাল চেহারা কালো চোখ ব্রু গুলো খুব অসাধারণ দেখাচ্ছে এখনও বিউটি পার্লারের কাঁচির আচর পড়েনি।

আমি খুব শক্ত হয়ে বসে আছি মেয়েটি খুব স্বাভাবিক তার আচরণে মনে হয় না সেই এক অপরিচিত এক যুবকের পাশে বসেছে।

চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

আমি পকেট থেকে মোবাইল বাহির করলাম ডাটা অন করে মেসেঞ্জারে গেলাম।

বন্ধু নীড়হারা প্রজাপতি অনলাইনে আছে এইটা তার ফেইজবুক আইডি নাম, ভাল নাম হৃদয়।

হাই হৃদয় কেমন আছিস.......

হৃদয় টাইপিং... .... হুম ভাল 

তুর কি খবর? 

.. .…..ভাল না খুব টেনশনে আছি

হৃদয় টাইপিং....... কেন? 

আমি এখন বাসে চট্টগ্রাম আস্তেছি।

হৃদয় টাইপিং...... তো কি হল?

আমার পাশে অপরিচিতা সুন্দরী একটি মেয়ে বসেছে কেমন জানি লাগতেছে।

হৃদয় টাইপিং .......অহ ম্যান ইনজয় ভয় কিসের।

দেশের যা অবস্থা আর আমার ব্যাগে বেশ কিছু টাকা আছে যদি।

হৃদয় টাইপিং ..... ব্যাগ কোথায় রেখেছিস।

আমার আর মেয়েটির সীটের মাঝখানে। 

হৃদয় টাইপিং..... অহ ম্যান তাড়াতড়ি তুর পাশে নিয়ে আয়।

আসলে আমি তো অনেক বোকা লোক টাকা হারানোর ভয়ে আছি অথচ নিরাপদে রাখছি না।
ব্যাগ টা টান দিতে মেয়েটার মাথা আমার ঘাড়ে এসে পড়ে একটু নড়েচড়ে আমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে কি অদ্ভুদ কান্ডরে বাবা।

এই কেমন আচরণ এই যে এই যে করে অনেক কিছু বলতে চেয়ে কিছু বলা হয়নি চুপচাপ বসে আছি মনের ভিতর অজানা ভয় জেগেছে কোন পার্লায় পড়লাম রে।
কত কি ভাবনা কি বিপদ সামনে আল্লাহ জানে। 
টাকার ব্যাগ টা শক্ত করে ধরেছি।

হৃদয় টাইপিং......... কি অবস্থা এখন?

বলিস না এখন তো মহা বিপদ আমার ঘাড়ের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।

হৃদয় টাইপিং..........হাও রোমান্টিক ইনজয় ম্যান  ছবি পাঠিয়ে দাও।

এখন ছবি কেমন করে তুলি বাম চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম গভীর ঘুম কি অদ্ভুত অপরিচিত কারো ঘাড়ে মাথা রেখে কেউ বেহুঁশ হয়ে ঘুমায়।
একটা ছবি তুলে হৃদয় কে পাঠালাম। 

হৃদয় টাইপিং........ অসাধারন দোস্ত জুস,তুদের খুব মানিয়েছে।

আমি রিপ্লাই দিতে গেয়ে মোবাইলের ব্যাটারী ডাউন হয়ে গেল সুইচ অপ হয়ে গেল মোবাইল টা পকেটে রেখে দিলাম।
বাহিরে ভারী বৃষ্টি হয় বৃষ্টির ফোঁটা ওর মুখে পড়ে একটু নড়াচড়া করল আমি গাড়ির গ্লাস ভাল করে বন্ধ করে দিলাম।
মন থেকে অজানা ভয় মুহুর্তে দূর হয়ে গেল। কেমন যানি হালকা হালকা ভাব এল,আমাদের যাত্রার দু ঘন্টা অতিক্রম হয়েগেল আর এক ঘন্টা চললে আমরা চট্টগ্রাম শহরে পৌছে যাব ওর মুখ ভাল করে একবার দেখেনি।
অথচ তারমুখো ছবি আমার হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছে কেমন যানি ভাল লাগা মনের ভিতর শীতল ভাব অনুভব হচ্ছে এই যেন হাজার বছরের চেনাজানা।
সাহস করে আমার হাতটা তার ঘাড়ের উপর দিয়ে মাথাটা বুকে টেনে নিলাম ততক্ষণে ও ডান কাদ হয়ে আমার কাদে হাত রেখে বুকে মাথা রেখে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে।
কি অভাগ কান্ড এমন করে কেউ ঘুমায়।

পাশাপাশি দুজন বসা আমার মনের ভিতর ভাবনার তুফান ভয়ে যাচ্ছে আর ও কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
কে জানে ঘুমের ভিতর কোন রঙিন স্বপ্ন দেখে।

চট্টগ্রাম শহরের অল্প রাস্তা বাকি নিদিষ্ট স্টেশনে বাস থেমে যাবে ঘুম ভেঙে যাবে ভেঙে যাবে ঘুমিয়ে ও জেগে দেখা স্বপ্ন।

বাসের ভিতর ফ্যান বন্ধ করে দিল তিনি নড়ে উঠল আমার বুক ছেড়ে সীটে হেলান দিয়ে সুজা হয়ে বসলেন কোন সারা শব্দ নেই।
আমার বাম পাশটা দীর্ঘ তিন ঘন্টা অবস প্রায় আমি ও নড়েচড়ে বসলাম।
তার এমন ভাব সারা পথ অপরিচিত একজন মানুষের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পাড় করেছে কোন অনুভূতি নেই খুব স্বাভাবিক।
আর আমার হৃদয়ে উতাল ঝড় ভয়ে যাচ্ছে একটু পর সেই নেমে যাবে ভয়ে।
পরিচয় জানা হয়নি নাম কি জিজ্ঞাস করেনি।
ভাবলাম মোবাইল নাম্বার টা চেয়ে নিব।

আরে বাস থেকে নেমে গেল আমি টের পেলাম না পিছন পিছন দূর দিলাম এই যে এই যে আমি বাসের দরজায় দু হাত দিয়ে অভাগ হয়ে থাকিয়ে আছি।
মেয়েটি সিএনজি চালকের সাথে কথাবলে পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করছে।
আমি ভাষাহীন কাদে ব্যাগ জুলিয়ে চোখে চশমা টা লাগিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি।
ও দিকে সিএনজিতে ব্যাগ উঠাল চলে যাবে সেই মহুতে মেয়ে টি ঘুরে দাড়িয়ে আমার দিকে থাকাল ঘাড় এমন ভাবে ঘুরাল খোলা চুল গুলো এলমেল হয়ে যায় আমার দিকে এগিয়ে এল।
খুব কাছে এসে বলল ধন্যবাদ।
আমি বাগরুদ্ধ ভাষাহীন মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি কোন সারা শব্দ নাই।
দীর্ঘশ্বাস পেলে আপনার নাম কি ততক্ষণে সেই চলে গেল।
এখন ও আমি ভাবনায় যাত্রা পথে খুঁজে বেড়ায় সেই সহযাত্রীকে।


Comments

Popular posts from this blog

চাটগাঁইয়া ভাষার কবিতা

চাটগাঁইয়া কবিতা....নোয়া পয়সা....