বঙ্গবন্ধু পরিষদ দুবাই আয়োজন করে ডাউ ক্রোজ নৌভ্রমণ উপলক্ষ্য চট্টগ্রাম মহানগর যুব লীগের আহবায়ক মহিদ্দীন বাচ্চু
"নৌভ্রমণ"
জিয়াউল হক
রাজা রাজ্য পরিচালনা করতে করতে ক্লান্ত হলে ভ্রমণে বাহির হত আনন্দ বিনোদন ব্যবস্থা করতেন রাজা বাদশাদের ভ্রমণের পছন্দের তালিকায় নৌ-বিহার ছিল অন্যতম ।
সুন্দরী রাণী উজির নাজির সেনাপতি বাদ্যদল তার সঙ্গী হতেন আনন্দ উল্লাস তিনি করতেন সেবা দাসীরা খেদমতে মশগুল থাকতেন।
রাজা বাদশার যোগ আর নাই দিন বদলেছে তবে রাজা বাদশাদের শখের নৌ-বিহার রয়ে গেছে ইচ্ছে করলে যে কেউ নৌ-বিহারে যেতে পারেন সাথে তাদের পরিবার পরিজন সঙ্গীনিদের নিতে পারেন জন্মদিন,বিবাহ,যে কোন উৎসব আয়োজন দলীয় আলোচনা সংবর্ধনা নেতারা কর্মীদের সাথে নিয়ে আনন্দ উৎসব করে মন কে চাঙ্গা করে।
গত শুক্রবার রাত নয় টা বঙ্গবন্ধু পরিষদ দুবাই আয়োজন করে ডাউ ক্রোজ নৌভ্রমণ উপলক্ষ্য চট্টগ্রাম মহানগর যুব লীগের আহবায়ক মহিদ্দীন বাচ্চু ভাই তিনি সম্প্রতি দুবাই ভ্রমণে আসে মূলত ওনাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য পরিষদের নেতাদের সাথে আমরা কর্মীরা সঙ্গী হলাম একগেঁয়েমি প্রবাস জীবনে বেশ একটি আনন্দময় দিন গেল তার খুঁটিনাটি কিছু বিষয় মোবাইলে টাইপ করলাম।
আমাদের আগে সিনিয়র নেতারা উপস্থিত সচারচর এমন হয় না আমরা তাদের দেখে লজ্জিত হলাম হিসাবে আমাদের আগে উপস্থিত হওয়ার কথা পরিষদের সভাপতি ওনার স্বভাবসুলভ ভাব লম্বা হে করে বলেন এতদেরি তাড়াতাড়ি উপরে উঠে যাও।
উপরে উঠে দেখি মনির ভাই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুখে সদা হাসি লেগে থাকে ওনার সাথে হাত মেলালাম কৌশল বিনিময় হল তিনি খুব ব্যস্ত সব প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ ব্যবস্থপনা তিনি করে থাকেন পাশে থেকে সহযোগিতা করতে দেখলাম মহিউদ্দিন মামুন,ইয়াছিন আরাফাত,আর একটা লোক দেহগতিক দিক যেমন মাশাঅাল্লাহ কাজে একে বারে পারফেক্ট সেলিম ভাই তাকে দেখলাম না সুষ্ঠু সুন্দর আয়োজনের জন্য তরিতকর্মা লোক খবর নিয়ে জানলাম তিনি বিশেষ কাজে আটকা পড়েছে আজকের প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করবে না।
দ্বিতল নৌযান খুব সজ্জিত রং-বেরং লাইটে ঝিলমিল ঝিলমিল করতেছে যদি আব্দুল আলিমের সেই নাওয়ের মত নয় নিচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং সহ বসার ব্যবস্থা নেতারা ও তাদের পরিবার পরিজন নিচে আমরা উপরে সব প্রস্তুত অতিথিরা সবাই এসেছে নৌযানে অবস্থান নিয়েছে এইবার দুই ঘন্টার যাত্রা হবে আরব সাগরে ভ্রমণের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্য।
সব প্রস্তুত নৌযান থেমে আছে মহিউদ্দিন মামুন ভাই পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ওনাকে জিজ্ঞাস করলাম ভাই যাই না কেন তিনি আমাকে বল্লেন "পয়সা পেক তামাশা দেক" ঠিক বুঝে উঠলাম না কিছুক্ষণ পর দেখলাম কর্তৃপক্ষ কে মনির ভাই লোক সংখ্যা হিসাব করে দিরহাম বুঝিয়ে দিল নাও হেলেদুলে চলতে শুরু করল তাহলে এই ব্যাপার।
আমরা দেরা দুবাই প্রান্ত মুখ সম্মুখে বার দুবাই এর দুইয়ের মাঝখানে নৌযানের যাত্রা মনির ভাইয়ের কন্ঠে মাইকে ঘোষণা সবাই নিচে নেমে আসুন ছোট পরিসরে আজকে আলোচনা সভা হবে দীর্ঘ বক্তৃতা হবে না আনন্দ হবে।
আমরা সবাই নিচে যাওয়াতে নৌযানের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কঠিন হয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বেশ কয়েক জন পরিষদের সদস্য ও সিনিয়র নেতা উপরে চলে যায় তারমধ্য ছিল মাসুদ ফরহান জুয়েল ভাইসহ আরো অনেকে মাইকের কল্যাণে নিচের প্রোগ্রামের সকল কার্যক্রম আমরা শুনতে পায়।
নিরিবিলি পরিবেশ প্রচন্ড গরমের দিনে সমুদ্রের হাওয়া মুহূর্তে দেহ শীতল হল মন কে রাঙিয়ে দিল সবাই যার যার আসনে বসে দুই পাড়ের আলো ঝলমল বাড়ির দৃশ্য দেখে আমি সামনে নাবিকের পাশে দাঁড়িয়ে সামনে থেকে সাগরের ছোট ছোট ঢেউ দেখি আমাদের নৌযান ধীরগতিতে চলছে পাশে বার দুবাই থেকে দেরা দুবাই পারাপারে ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা গুলো সাগরের বুক ছিড়ে দাপিয়ে ছুটে চলে নৌকার যাত্রীরা হাতে ইশারা দিয়ে অভিবাদন জানাই আমরা হাত নেড়ে পালটা জবাই দিই শুরু টা খুব চমৎকার।
মনির ভাইয়ের মাইকে কান ঠিক রাখি আজকের সংবর্ধনা ও নৌভ্রমনের অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য আহবান করেন পরিষদের সভাপতি নুরুন্নবী রওশন সাহেব কে তিনি আসন ছেড়ে মনির ভাইয়ের পাশে দাঁড়ালেন সংক্ষিপ্ত আয়োজন মঞ্চের ব্যবস্থা হয়নি।
সংবর্ধিত অতিথি মহিদ্দীন বাচ্চু ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান স্বপনসহ পরিষদের সিনিয়র নেতাদের পরিচিতি পর্ব শেষ হল।
সংবর্ধিত অতিথি মহিদ্দীন বাচ্চু আজকের আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ কে ধন্যবাদ ও প্রবাসীদের কে রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করে দেশের জন্য তাদের পরিবার পরিজন ছেড়ে প্রবাস জীবনের আত্নত্যাগের জন্য স্যালুট জানাই।
বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কথা বলে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে সবার প্রতি আহবান করে।
তখন আমার পিছনে দুই জন লোক বাচ্চু ভাইয়ের কথা ঠিক সহ্য করতে পারছেনা কথা গুলো শুনার পর তাদের গাত্রদাহ হল এদের আগে কখন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের মিটিং দেখেনি কি করে তারা এইখানে এল বলতে পারব না তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখে চোখ পড়তে কথা বন্ধ করে দিল আমার সাথে হিন্দিতে কথা বলে আমি তাদের বাংলাতে কথাবার্তা বলি।
আমাকে চিনতে পারেনি কারণ আমার গায়ে সাদা শার্ট নেভী ব্লু কার্লারের প্যান্ট যা দেখতে নাবিকের সহকারীর মত লাগে আমি নাবিকের পাশে দাঁড়িয়ে আছি এই কথা বলার মানে হল তারা পরিষদের সদস্য না কেমন করে এল বুঝে নিলাম কাওয়া এইখানে চলে এসেছে।
মজিবুর রহমান স্বপন ভাই একই সুরে কথা বলেন পরিষদের সভাপতি নুরুন্নবী রওশন ভাই সংবর্ধিত অতিথিসহ পরিষদের সকল সদস্য কে আজকের পার্টি উপভোগ করতে আহবান জানিয়ে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য শেষ করে।
তন্দুরী ডান্স (আরবীক নিত্য) দু পাশে অতিথি বসা মাঝখানে শুরু হল আরবী গানের সাথে তান্দুরী ডান্স লাইটিং পোষাক পরিহিত এক আরবী যুবক এত ছোট জায়গায় চলমান নৌযানে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে অসাধারণ নিত্য পরিবেশন জাহাজের আলো নিবিয়ে বিশেষ একটি পোষাকের ঝিলমিল আলোর ঝিলিক এক আঙ্গুলের উপর চাকা বানিয়ে সবার মাথার উপর দিয়ে ঘুরানো এইসব দৃশ্য উপস্থিত সবাই কে মুগ্ধ করে খুব উপভোগ্য হয়ে উঠে।
মিউজিক বন্ধ হতে তন্দুরী ডান্স শেষ মুহু মুহু কড়তালিতে হল ভরে যায়। মনির ভাই মাইক তুলে দিলেন ইয়াছিন আরাফাত কে তিনি মেজবা ভাইকে অনুরোধ করেন গান শুনানোর জন্য তিনি না করে বাঁচতে পারলেন না গাইতে হল এরপর বাপ্পী শরিফ,আরাফাত,সহ অনেকে গাইলেন মধু কই কই আরে বিষ খাইলা,কইলজের ভিতর গাতি রাইকুম তোয়ারে,অপরাধী মেয়ে,আমি তো ভাল না, পাশে ভাবিরা গুন গুন করে গলা মিলালেন দারুণ একটা সময়, ফুটবল মাতাচ্ছে সারাবিশ্ব মাঝে মাঝে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল বির্তক কম চলেনি।
ততক্ষণে আমরা মুক্তম ব্রিজ ঘুরে এসে আরব সাগরের হায়াতের দিকে জোয়ারে সাগর পরিপূর্ণ এই যেন ভরা যৌবন মহিউদ্দিন মামুন ঘোষণা দিলেন অনেক মজা হয়েছে সবাই খাবার খেয়ে নিন বেশি করে নিয়ে কেউ অপচয় করবে না সামনে বুপে বক্সের দিকে যেতে চাইলে দাঁড়ান আগে ভাবিরা বাচ্চারা নেবে তারপর আপনারা।
লাইন ধরে বুপে বক্সের দিকে এগিয়ে গেলাম বক্স খুলতে খাবারের গন্ধ ছড়িয়ে গেল রকমারি সব খাবার বিরানী থেকে শুরু করে দশ পনের পদের খাবার এইসব নাম বললে জিভে জল এসে যাবে।
একপাশ ভ্রমণ হয়ে ফিরতি মুখি সাগর থেকে জমি অধিগ্রহণ করে ফ্লাম দেরা সিটি গড়ে উঠছে সবাই একনজরে ও দিকে থাকিয়ে আছে ভাবছে হইত আমার দেশে কবে।বিশাল আকারের একটি ভ্রমণ জাহাজ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আলো ঝলমল দৃশ্য নজর কেড়েছে সবার সামনের ভাগে কালো প্যান্ট কোট টাই মাথায় গুল টুপি পড়া একব্যাক্তি বুকে হাত দিয়ে মাথা নিচু করতে জাহাজের সব দর্শক কড়তালি দিয়ে অভিবাদন জানাল আমরা কিছু না বুঝে কড়তালি দিয়ে তাদের সর্মথন জানালাম পরে অনুমান করলাম কোট পড়া লোক টি মিউজিশিয়ান আমরা মিউজিক শো এর শেষ অংশ দেখেছি।
হঠাৎ আমাদের নৌযানের আলো বন্ধ হয়েগেল নিচ থেকে কেউ একজন বলে ছিল জেনারেটর নষ্ট হয়েছে একটু পর ঠিক হয়ে যাবে।
নৌযান ঠিক চলছে আমাদের ভ্রমণের সময় শেষের দিকে নৌযানের সব লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আশেপাশের সৌন্দর্য আরো ভালভাবে দেখা যায় এতক্ষণ লাইটের জন্য ভাল ছবি হয়নি এখন মোবাইলের ক্যামেরা ভাল ছবি হচ্ছে আমার বন্ধু মোহরম আলী আমাকে দুই একটা ছবি তুলে দিল অন্য বন্ধুদের সাথে সেল্ফি বন্ধি হলাম।
আমাদের আর অল্প সময় বাকি আছে নিদিষ্ট স্থানে পৌছানোর একটু পর নোঙর করব জেনারেটের আলো ফিরে এল।
পরিষদের সভাপতি নুরুন্নবী রোশন ভাই সম্পাদক মনির ভাই প্রিয় নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু ভাই মজিবুর রহমান স্বপন কে নিয়ে উপরে উঠে আসে সবার ভ্রমণ কেমন হল কোন সমস্যা হল কি খবরা খবর নিল।
দুই পর্ব করে নেতাদের সাথে ফটোসেশন করা হল এর মধ্য দিয়ে আমাদের ভ্রমণ শেষ হল।
আমাদের সাথে যারা অংশ নিলেন চট্টগ্রাম মহা নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু,ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান স্বপন,দুবাই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব নুরুন্নবী রোশন সাধারণ সম্পাদক এস এম মনির,মহিউদ্দীন মামুন,ফিরোজ, মাসুদ ফরহান জুয়েল,এয়াকুব,ইয়াছিন,শাহাজান চৌধুরী, শফি,সবুর ভাই, আরাফাত,এজাহার,ইলিয়াছ,মিয়া মহিউদ্দীন টিটু,মেজবাহ,আরাফাত,জিমন,আইয়ুব,ইব্রাহিম,লোকমান,মোহরম আলী,শারজা থেকে আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিল।
পরিশেষে বলব প্রবাস জীবনে সাধারণদের নিয়ে একটা অসাধারণ আয়োজন এই অল্প সময়ের জন্য নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছি আনন্দ উৎসবে জীবন যখন থমকে যায় তখন এমন ভিন্ন কিছুর প্রয়োজন চমৎকার একটি ভ্রমণ আয়োজনের বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও উপলক্ষ্য মহিদ্দীন বাচ্চু ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
Comments
Post a Comment