প্রবাস জীবনের গল্প।

জুতা"
জিয়াউল হক
ভাই এই জুতা গুলো দেখান তো
এই টা না উপরের দিকে ডানের ও টা
সদ্য পিতা হয়েছে প্রবাসী মাহমুদ ইন্টারেটের কল্যাণে পুত্র সন্তানের মুখ দর্শন হয়েছে।
মন চাই নব পুত্রকে খুলে নিতে আদর করে কপালে ছুমা খেতে নরম হাতের ছুঁয়া পেতে।
জীবনের এহেন শ্রেষ্ট মুহুর্ত অধরা থেকে গেল স্বপ্ন শুকিয়ে গেল এমন হাজার ও প্রবাসীর স্বপ্ন শুকিয়ে মরুভূমির বালি কণার মধ্যে চিকচিক করে প্রতিনিয়ত।
হ্যাঁ ঠিক আছে দিন
বয়স কত?
এক মাস
এটা শূন্য থেকে তিন মাসে বয়সী বাচ্চাদের জন্য
মাহমুদ সাহেব চকলেট রংঙের জুতা খুব মনে  ধরেছে।
ভাই এই টা প্যাকেট করে দিন
দামাদামি ছাড়া বোধ মাহমুদ সাহেব এই প্রথম কিছু বাজার থেকে কিনে আনলেন।
জুতা নিয়ে তার বাসায় ছুটে চলে যতদূর পথ হেঁটেছে জুতা প্যাকেট খুলে খুলে দেখেছে ভেবেছে ছেলের পায়ে কেমন মানাবে,দেখতে কেমন লাগবে, ইস বাড়ি গেয়ে জুতা যদি বাবুর ছোট ছোট পায়ে পড়ে দিতে পারতাম,আচ্ছা সাইজে মিলবে তো আরো কত কি।
মাহমুদ জুতা কেনার পর মন বড় অশান্ত হয়েগেল নব পুত্র কে খুলে নিতে কাছে পেতে ব্যাকুল হয়েগেল বার বার পুত্র মুখ ভেসে উঠে।
ভাবতে লাগল কি করে কিভাবে বাড়িতে পাঠাবে জুতা।
জুতা পায়ে বাবুর একটি ছবি দেখতে পারলে কিছু টা শান্তি পেতাম।
প্রতিদিন কাজ শেষে খুঁজে বাড়িতে যাওয়ার লোক পাওয়া যায় কি?
অন্য সময় নিকট পরিচিত লোক খুব সহজে পাওয়া যেত এখন কাহারো তেমন খবর মেলে না
এইভাবে দিন চলে যাচ্ছে জুতা কোনমতে বাড়িতে পাঠাতে পারে না বিষণ মন খারাপ।
ইতিমধ্যে মাহমুদ খবর পেল তার গ্রামের একটা লোক বাড়িতে যাবে ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করে তিনি প্রথমে নিতে রাজি হল না অনেক আকুতি মিনতির পর মাহমুদ কে কথা দিলেন।
বিমানবন্দরে গেয়ে মাহমুদ ফোন দিলেন ভাই আপনি কোথায়?
আমি তো অনেকক্ষণ আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম দেখা না পেয়ে ভিতরে চলে গেলাম বিমান ছাড়ার সময় তো প্রায় শেষ।
আমি রাস্তায় আটকে গেলাম তাই দেরি হল ভাই দয়া করে একটু বাহিরে আসেন আমার বাবুর জুতা নিয়ে এসেছি।
ভাই আমার তো এমিগ্রেশন সম্পূর্ণ হয়েগেছে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান ছেড়ে দিবে সম্ভব না
মন ভার করে জুতা দুখানা বুকে জড়িয়ে মাহমুদ সুজা অফিসে গেল।
স্যার আমাকে ছুটি দিন আমি বাড়ি যাব।
কি প্রয়োজন হঠাৎ বাড়ি যেতে হবে?
মাহমুদ কান্নাভরা কন্ঠে বুকে জড়িয়ে রাখা জুতা স্যারের টেবিলে রেখে বলে এই জুতা আমার বাবুকে পড়িয়ে দিতে বাড়িতে যাব।
আমার পাসপোর্ট দিন।
বড় সাহেব দমক দিয়ে বলে যাও এখন অনেক কাজ ছুটি দেওয়া যাবে না পাগলামী ছাড়ো এইসব জুতা বুকে জড়িয়ে রাখো না আরব সাগরে বাসিয়ে দাও।
পাগল কোথাকার বলে হেঁসে হেঁসে চলে গেল।
প্রবাসে বড় সাহেবরা কখন ও সাধারণ শ্রমিক প্রবাসীদের দুঃখ বুঝবে না তারা তো স্ত্রী সন্তান পরিবার নিয়ে বসাবাস করে।
কি করে বুঝবে পরিবার থেকে দূরে থাকার বিরহ নব জন্ম সন্তান কে ছুঁয়ে দেখার আকুতি।
মাহমুদ বিষণ মন খারাপ করে জুতা জোড়া বুকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে রাতে ঘুমিয়ে গেল
গভীর রাতে স্বপ্নে দেখে জুতা বাবুর পায়ে পড়িয়ে দিল বাবুকে খুলে নিল বাড়ির সবাই কে দেখায় দেখ দেখ আমার ছেলের পায়ে জুতা গুলো কেমন মানিয়েছে একদম রাজপুত্রের মত লাগে
বাবু কে অনেক আদর করে ছেলে তার আঙ্গুল ধরতে চাই ছোট ছোট নরম হাত গুলো দিয়ে ছুঁয়া দিল।
মন টা ভরে উঠল।
সকালে মাহমুদ খুব সস্থি বোধ করে তৃপ্তি বোধ করে।
মাহমুদ কাজের যাবার সময় জুতা জোড়া সাথে নিল আদর করে চুমু খেয়ে আরব সাগরে ভাসিসে দিল।
এইভাবে সাধারণ প্রবাসীরা তাদের হাজার স্বপ্ন আশা ভালবাসা স্বপ্নে পূরণ করে।
আর হাজার স্বপ্ন
চোখের জল আরব সাগরের সাথে মিশিয়ে দেয়।
প্রবাস জীবনের গল্প

Comments

Popular posts from this blog

একটি মেয়ে দৌড়ে বাসে উঠে বৃষ্টিতে অর্ধেক ভিজে.............

চাটগাঁইয়া ভাষার কবিতা

চাটগাঁইয়া কবিতা....নোয়া পয়সা....